এখনো উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে (Uttarakhand tunnel crash) আটকে রয়েছে ৪১ জন শ্রমিক।উত্তরাখন্ড খবর (uttarakhand news)অনুযায়ী তাঁদের আর ১২-১৫ ঘণ্টার মধ্যেই ভালোভাবে উদ্ধার করা যাবে বলে আশাবাদী জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।সুড়ঙ্গের মুখ ধসে যাওয়ার কারণে পাথর সরে যেতে সমস্যা আরও সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা সুড়ঙ্গের মধ্য ৩ ফুট মতো একটি পাইপ ঢোকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। যার মধ্যে দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবেন শ্রমিকেরা।
কি ঘটেছে
রবিবার সকালে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মকাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ একটি সুড়ঙ্গের একাংশ ভেঙে পড়ে। ফলে ওই সুড়ঙ্গের মধ্যে আটকে থেকে যান ৪১ জন শ্রমিক। সেই ঘটনার এত ঘণ্টা পেরিয়েছে। তবে তাঁদের সুস্থ রাখতে ও উদ্ধারের চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছেন না উদ্ধারকারীরা। সুড়ঙ্গপথে খাবার ওষুধ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে। আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিকের সঙ্গে নিয়মিত সঙ্গে যোগাযোগও রাখা হচ্ছে। কিন্ত বারবার ধস নামার জন্য উদ্ধারকাজের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
উদ্ধার কার্য কিভাবে হচ্ছে :
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর প্রধান অতুল কারওয়াল জানিয়েছেন, “শ্রমিকদের উদ্ধারকার্যের জন্য একটি বিশেষ অত্যাধুনিক যন্ত্র আনা হয়েছে হয়েছে। ভাঙা সুড়ঙ্গে ধসে যাওয়া পাথরকে ফুটো করে তিন ফুটেরও কম দৈর্ঘ্যের একটি পাইপ ঢোকানো হবে। যেটা দিয়ে শ্রমিকরা বেরিয়ে আসবে”। কারওয়াল আরও জানান , “আমেরিকান অগার’ নামে ওই খননযন্ত্র সহজেই ৭০ মিটার পাথর কেটে ফেলতে পারে।” মঙ্গলবার রাতে সুড়ঙ্গ এলাকায় নতুন করে আবারও ধস নেমেছে, আগামী ১২-১৫ ঘণ্টার মধ্যে এই যন্ত্র তা সরিয়ে ফেলতে পারবে। খননযন্ত্রটি ঘণ্টায় ৫ মিটারেরও বেশি পাথর কাটতে পারবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
অত্যাধুনিক যন্ত্রটি কি :
কারওয়াল ‘এনডিটিভি’কে জানিয়েছে , ‘‘ইতিমধ্যেই অত্যাধুনিক যন্ত্র ‘আমেরিকান অগার’ যন্ত্রটি কাজ শুরু করেছে। পাইপের এক দিকের মুখ সুড়ঙ্গে ঢোকানো হয়েছে। দ্বিতীয় অংশটি ঢালাই করা হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিটার গতিতে পাথর সরানো গেলে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার মধ্যে শ্রমিকদের রক্ষা করা যাবে’’ উদ্ধারকার্যের সময় সুড়ঙ্গে খননকাজ চালানোর সময় নানান বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।বেশ কিছু শক্ত পাথরে খননযন্ত্র আটকে যাচ্ছে। আবারও যদি নতুন করে পাথর ধসে পড়ে, তা হলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যেতে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
যন্ত্রটি বিকল হলো :
আমেরিকার অত্যাধুনিক যন্ত্রটি বিকল হলো। পাথর কাটার সময় লোহা ও ইস্পাত থাকার জন্য যন্ত্রটি অকেজো হয়ে পড়ে। তবে আবারও যন্ত্রটি সারিয়ে কাজ এগোচ্ছে। আশঙ্কা করা হয়েছিল যন্ত্রটি সরানো যাবে না।খবর অনুযায়ী, আর মাত্র ১৫ মিটার বাকি আছে এবং ২১ জন উদ্ধারকারি সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়েছে। বাইরে অস্থায়ী মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। তবে মাঝখানে ধস নামার জন্য কাজ ব্যাহত ছিল। এখনো পুরো দমে কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি সবাইকে উদ্ধার করা যাবে।
তাইল্যান্ড উদ্ধারকারি সংস্থা:
উত্তরাখন্ড সরকার শ্রমিকদের নিরাপদে উদ্ধার করতে তাইল্যান্ডের একটি সংস্থাকেও ডেকে পাঠিয়েছে । ২০১৮ সালের জুন মাসে তাইল্যান্ডের একটি গুহা বন্যার জলে ভেসে গিয়েছিল। তাতে আটকে পড়েন ১২ জন খুদে ফুটবলার এবং তাদের কোচ। সেই সময় অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তাদের উদ্ধার করে এনে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয় তাইল্যান্ডের ওই উদ্ধারকারী সংস্থা। এ বার এখানেও সেই সংস্থার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাইছে উত্তরাখন্ড সরকার।
কারা উদ্ধারকার্যে যুক্ত :
বৃহস্পতিবারের মধ্যেই উদ্ধারকাজ শেষ হয়ে যেত।কিন্তু নতুন করে ধস নামায় সমস্যা তৈরি হয়। ১৬০ জন উদ্ধারকারী উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। রয়েছেন জাতীয় এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ইন্দো টিবেটান পুলিশ এবং বর্ডার রোডওয়েজ়ের বাহিনী।
পশ্চিমবঙ্গ :
ধসে যাওয়া সুড়ঙ্গে আটকে আছেন পশ্চিমবঙ্গের তিন শ্রমিকও । হুগলির বাসিন্দা জয়দেব প্রামাণিক, সৌভিক পাখিরা এবং কোচবিহারের মনির তালুকদার। তাদের পরিবার উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছে।