Podua Astomi: কথায় আছে, “বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন “। বাঙালির ঘরে উৎসবের শেষ নেই। এক এক জায়গায় এক এক রকমের রীতি নীতি মেনে নানান পূজা হয় । তেমনই এক পারিবারিক পার্বন হল “হলোপৌড়া অষ্টমী”। মহাষ্টমী, কৃষ্ণাষ্টমী, রাধাষ্টমীর মতো এও এক অনুষ্ঠান । কিন্তু এর (Podua Astomi) প্রচলন কম। কিন্তু কি এই পৌড়া অষ্টমী? কেনই বা পালন করা হয়? আজ তা জানবো।
কি কি নাম রয়েছে:
“হলোপৌড়া অষ্টমী” বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে খ্যাত। বাংলার অন্যতম সামাজিক ও পারিবারিক উৎসব এই “পৌড়া অষ্টমী” (poura astomi)। কারো কাছে “পোড়া অষ্টমী”বা “প্রথমা অষ্টমী” (prathama astomi)বা “প্রথমাষ্টমী (prathmstomi)” বা “পড়ুয়া অষ্টমী” (porua astomi) বা “পড়ুয়া পূজা” (podua puja) নামে পরিচিত।
কারা পালন করে :
পরিবারের প্রথম কিংবা জ্যেষ্ঠ সন্তানেরা পরিবারের মঙ্গল কামনায় এই পার্বন(Podua Astomi) পালন করে থাকে। ছেলে বা মেয়ে সবাই এই পূজা করে। মেয়েরা বিয়ের পর শশুর বাড়িতে থেকেও পূজা করতে পারে। অনেকেই শশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি এসে পূজা করে।আসলে এই পূজা বাড়ির বড়ো সন্তানদের করতে হয়। যেকোনো বয়েসেই এই পূজা করতে পারে।
কিভাবে পালিত হয়:
এই অনুষ্ঠানে (Podua Astomi) মামা বাড়ি থেকে নতুন পোশাক, চন্দন, ধান, দূর্বা এবং ফুল আনা হয়। তবে মামাবাড়ি থেকেই যে আনতে হবে এমন কোনো কথা নেই। নিজের বাড়িতেও কেনা হয় নতুন জামাকাপড়। পড়ুয়ারা নতুন জামা কাপড়, মালা, ঘুমসি পরে পূজায় বসে।বাড়ির উঠোনে তুলসিতলার পাশে সন্তানের মঙ্গলের কামনায় মায়েরা কলাপাতায় বিরির বড়ি দেন। যে পূজা করে সে এদিন হলুদ ও গঁধাউলার (আবাটা) মিশ্রণ গায়ে মেখে স্নান করার পর নতুন বস্ত্র পরেন।তারপর মা তার কপালে মঙ্গল টীকা পরিয়ে দেন। বাড়ির বড়রা আশীর্বাদ করেন। তারপর তারা পূজা করতে বসে। এক কথায় বলতে গেলে, এই দিনটি স্পেশাল শুধু মাত্র বাড়ির বড়োদের জন্য। ছোটদের এখানে কোনো সুযোগ নেই।
কি খাওয়া হয়:
এদিন নানা রকম খাওয়ারের আয়োজন করা হয়।বাড়িতে পিঠে পুলি ,মিষ্টি ,পায়েস,পলাও বানানো হয়। দুপুরের আহারেও থাকে আমিষ-নিরামিষ নানাপদ। যাদের অষ্টমী তাদের এদিন “ভুজা” বা মুড়ি খাওয়া বারণ।
পড়ুয়া অষ্টমী তিথি (Podua Astomi tithi)
রাস পুজোর পর কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে সুবর্ণরেখার সীমান্তে অখন্ড মেদিনীপুর সহ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে আনন্দের সাথেই পালিত হয় পৌড়া অষ্টমী (podua astomi )।
হারিয়ে যাচ্ছে এই রীতি
লোকসংস্কৃতির (folk culture )এই রীতি ওড়িশাতেও রয়েছে। এই পৌড়া অষ্টমী তারাও পালন করে। কিন্তু বর্তমানে মানুষের পারিবারিক বন্ধনের সাথে যুক্ত ও আমাদের লৌকিক সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত এই উৎসবগুলির রঙ আস্তে আস্তে ফিকে হচ্ছে, আগ্রহ হারাচ্ছে বর্তমান সমাজ।
অথচ এক সময় এই পার্বন নিয়ে সবাই মেতে থাকতো। বিশেষ করে বড়োরা এই পুজোর জন্য অপেক্ষা করে থাকতো। তা আর দেখা যায় না।কিন্তু এগুলোকে হারাতে দেওয়া যাবে না। সবাই মিলে একে রক্ষা করতে হবে।