সাহারা গ্রুপ ( Sahara Group) তার কর্ণধার সুব্রত রয় (Subrata Roy Sahara) গতকাল রাতে প্রয়াত হন । মাইক্রো ফাইনান্স হোক কিংবা সংবাদপত্র, আবাসন ব্যবসা হোক বা ক্রিকেটের স্পনসর- সব দিক থেকেই সাহারা গ্রুপ ছিল একটি পরিচিত নাম। মঙ্গলবার রাতে সাহারা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সুব্রত রায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। একসময় সাহারা মানেই সুব্রত রয় বলে সবাই চিনতো।
বেশকিছু দিন ধরে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস-সহ একাধিক রোগে ভুগছিলেন সুব্রত রায়। মুম্বইয়ের একটি কোকিলা বেন হাসপাতালে তিনি ভর্তি ছিলেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়(Subrata Roy death)। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। রেখে গেলেন তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রায়, ছেলে সুশান্ত ও সীমান্ত রায়কে।
বিহারের আরারিয়া জেলায় জন্ম সুব্রত রায়ের। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হওয়ার পর মাত্র ২ হাজার টাকা নিয়ে তিনি ব্যবস্যা শুরু করেন। ১৯৭৬ সালে সাহারা ফাইনান্স শুরু করেন করেন। তার পর সাহারা নামেই সব কোম্পানি করেন। তারপর একে একে হোটেল ব্যবসা, আবাসন ও সংবাদ মাধ্যমে পা রাখে সাহারা গ্রুপ । রাষ্ট্রীয় সাহারা ও সাহারা টিভি নামে দুটো চ্যানেল চালু করেন সুব্রত রায়। ১০ হাজার একর জায়গা জুড়ে পুনেতে শুরু করেন তাঁর অ্য়াম্বি ভ্যালি প্রকল্প। ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান স্পনসর ছিল সাহারা ইন্ডিয়া (Sahara India)। এছাড়া আইপিএল এ পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া টিমের মালিকও ছিলেন তিনি। IPL এ KKR সৌরভ গাঙ্গুলীকে (Sourav Ganguly)বের করে দেওয়ার পর পুনে দলের ক্যাপ্টেন করে এনেছিল সৌরভ গাঙ্গুলীকে। যদিও তার দল সেভাবে সাফল্য পায়নি।
খুব কম সময়েই দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্প গোষ্ঠীতে পরিণত হয় সাহারা। কিন্তু বড় ধাক্কা আসে ২০০২ সালে।মাইক্রো ফাইনান্সের নামে টাকা তোলার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে সাহারা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালে জেল হয় সাহারাশ্রী সুব্রত রায়ের। ২০১৬ সালে প্যারোলে জেল থেকে মুক্তি পান।
সাহার গ্রুপের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মৃত্যু হয়েছে সাহারাশ্রী সুব্রত রায়ের।নানান রকম শারীরিক সমস্যা নিয়ে তাঁকে গত ১২ নভেম্বর মুম্বইয়ের কোকিলা বেন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ।শেষপর্যন্ত কার্ডিও রেসপিরেটরি অ্যারেস্টে তার মৃত্যু হয়।
সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার (Sahara Group)-এর প্রতিষ্ঠাতা সুব্রত রায় প্রথম জীবন শুরু করেন নিমকি চানাচুর। তারপর কঠোর পরিশ্রম করে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও তার ব্যবসার প্রসার ঘটান।
একটা সময় ভারতের অন্যতম বৃহৎ কর্মসংস্থান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল সাহারা। তার পরেও সাহারা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছিল সাহারা ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে। সেজন্য জেল পর্যন্ত যেতে হয়েছিল সাহারা-কর্তাকে।
২০০৮ সালে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি(SEBI)-র সঙ্গে সাহারা ইন্ডিয়ার আইনি বিরোধ বাঁধে।তারপর টানা ৬ বছর ধরে মামলা চলার পর ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে তলব করা হয় সাহারাশ্রী সুব্রত রায়কে। কিন্তু, তিনি হাজিরা না দিলে তাঁকে আদালতের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয় ।দু-বছর তিহার জেলে বন্দি থাকেন। ২০১৬ সালে জামিনে মুক্তি পান সুব্রত রায়। এরপর সাহারাকে তাদের সম্পত্তির একটি অংশ বিক্রি করে লগ্নিকারীদের অর্থ ফেরতের অনুমতি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু বিশাল সংখ্যক আবেদনকারী টাকা ফেরতের কোনো আবেদনই করেনি বলে সেবি জানায় । তবে সম্পত্তি বিক্রি করে আবেদনকারীদের অনেককে টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়েছে।